সাধারণ কথা: আমাদের জীবনে তথ্য আদান-প্রদানে নানা ঝুঁকি থাকে এবং এই ঝুঁকি কমানো ও ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের কাছে চলে যেতে পারে তাই গোপনীয়তা রক্ষা করা দরকার। এই জন্য আমরা একটি মানববন্ধন করব।
আগামী কয়েক দিন আবারও কিছু মজার কাজ করব। এই মজার কাজগুলোর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করার ঝুঁকি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি মোকারবলায় কী করা যায়, তার একটি কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করব এবং সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করার জন্য একটি মানববন্ধন করব। চলো, আমরা মানববন্ধনের প্রস্তুতি নিই।
আমাদের কি গত অভিজ্ঞতার কথা মনে আছে? যেখানে আমরা একটি বিদ্যালয় পত্রিকা বানিয়েছিলাম। গত কয়েকটি সেশনে আমরা একটি বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরি করেছি। বিদ্যালয় পত্রিকায় যেসব উপকরণ যুক্ত করেছিলাম, সেখানে তথ্য আকারে কী কী ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যবহার ছিল, তার একটি তালিকা নিচের ছকে লিখি।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের তালিকা ১। ২। ৩। ৪। |
এই বিদ্যালয় পত্ৰিকা মূলত তথ্য আদান-প্রদানের এক ধরনের মাধ্যম। এ রকম আরও অনেক মাধ্যম ব্যবহার করেও আমরা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। সেই মাধ্যমগুলো ডিজিটালও হতে পারে আবার ডিজিটাল মাধ্যম ছাড়াও হতে পারে। আবার বিদ্যালয় পত্রিকা তৈরি করতে আমরা ডিজিটাল মাধ্যম ও হাতে কলমে কাজ করেছি। নিচের ছকে সেগুলোর নাম দলে আলোচনা করে লিখব। আমানের কাজটি ক্লাসের সবার উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করব।
ক্রমিক | ডিজিটাল | ডিজিটাল নয় |
---|---|---|
১ | মোবাইল ফোন | খবরের কাগজ |
২ |
|
|
৩ |
|
|
এখন চলো আগে ব্যক্তিগত তথ্য কী তা জেনে নিই।
ব্যক্তিগত তথ্য; আমাদের বইয়ের শুরুতেই আমরা জেনেছি যে আমার নাম, বয়স, আমি কোন শ্রেণিতে পড়ি এসব হচ্ছে তথ্য। আবার এগুলোকে ব্যক্তিগত তথ্যও বলা যায়। যদি আমি আমার পরিচয় আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষককে দিতে চাই, তাহলে আমি তাকে কী কী তথ্য দেব? আমার নাম, আমার বাবা-মা বা অভিভাবকের নাম, আমার বয়স, আমার বাড়ির ঠিকানা ইত্যাদি। অর্থাৎ এই তথ্যগুলোই হচ্ছে আমার পরিচয়, আর এগুলোই ব্যক্তিগত তথা। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে যে তথ্যের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির পরিচয় চিহ্নিত করা যায়, তা-ই হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য।
এছাড়া ফোন নম্বর, ই-মেইল এর ঠিকানা, আমার স্বাক্ষর, আমার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এসব ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে পড়ে। এসব তথ্য আমি নিজে জানাতে না চাইলে অন্য কারও জানার কথা নয় কিংবা জানতে হলে আমার অনুমতি নিয়ে জানাবে।
আর কী কী ব্যক্তিগত তথ্য আমাদের থাকতে পারে তা নিচের ছকে লিখি।
ব্যক্তিগত তথ্যের তালিকা |
---|
নিজের ছবি
|
আগের কাজ থেকে আমরা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি। কিন্তু সব তথ্যই আমরা সবার কাছে আদান-প্রদান করি না। অনেক সময় আমাদের ভুল বা অসচেতনতায় বা অনুমতি ছাড়াই তথা আদান-প্রদান হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে আমরা কী বলতে পারি? এটি হলো তথ্য আদান-প্রদানের ঝুঁকি। আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি এটি কেন ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ঝুঁকিতে আমাদের সামাজিক, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। এ জন্য আমাদের খুবই সতর্ক থাকা উচিত। আমরা এখন দলে আলোচনার মাধ্যমে অনুসন্ধান করে বের করব যে তথ্য আদান-প্রদানে কী কী ঝুঁকি থাকার আশংকা রয়েছে। এ কাজটি করতে আমরা একটি জরিপ করতে পারি। জরিপ পরিচালনার জন্য আমরা নিজেরা কয়েকটি প্রশ্ন সংবলিত তথ্য আদান-প্রদানে সম্ভাব্য ঝুঁকি কী হতে পারে তা খুঁজতে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করব। মনে রাখতে হবে যে আমরা নিচের তিনটি তথ্য জানতে তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি...
কীভাবে তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে;
কোন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে;
তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হলে কী কী ক্ষতি হতে পারে।
জরিপের প্রশ্নমালা তৈরি করার সুবিধার্থে এখানে নমুনা হিসেবে তিনটি প্রশ্ন করে দেওয়া হলো, বাকি প্রশ্নগুলো আমরা দলগতভাবে করব। এ বিষয়ে তোমাদের কোনো সহায়তা প্রয়োজন হলে তোমরা শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারো। হ্যাঁ/না, বহুনির্বাচনী বা সংক্ষেপে উত্তর দেওয়া যায় এমন প্রশ্ন করতে হবে, যেন তথ্যদাতার কাছ থেকে খুব সহজেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়।।
সবার মতামতের ভিত্তিতে আমরা সাক্ষাৎকার ফরমটি চূড়ান্ত করব। সবার বইয়ে চূড়ান্ত প্রশ্নমালাটি লিখে ফেলব। যেন একেকজনের বইয়ের প্রশ্নমালা একেকজন উত্তরদাতার জন্য ব্যবহার করা যায়।
নিশ্চয়ই জরিপের জন্য প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়ে গেছে। এবার ক্লাস শেষে বা বিরতির সময় বা অন্য কোনো সুবিধাজনক সময়ে প্রত্যেক দল আমরা নিজেদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থী মিলিয়ে মোট ১০ জনের ওপর জরিপ পরিচালনা করব।
যাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করব তাদের কোন প্রশ্ন বুঝতে অসুবিধা হলে তাদের বুঝিয়ে প্রশ্নটি করতে হবে। কারও ক্ষেত্রে প্রশ্নমালাটি পূরণ করতে সমস্যা হলে তাদের তথ্য জেনে আমরাই সেটি পূরণ করে দেব বা সহায়তা করব। দলের সবাই একজনের কাছে তথ্য সংগ্রহের জন্য যাবো না। প্রত্যেকে একেক জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করব। এতে খুব দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করতে পারব। ১ নং অভিজ্ঞতায় মানবীয় উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় রাখব।
তথ্য আদান-প্রদানের ঝুঁকি বুঝে সে বিষয়ে সচেতন করতে একটি মানববন্ধন করব, এটি নিশ্চয়ই আমাদের মনে আছে। জরিপের মাধ্যমে আমরা তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে কী কী ঝুঁকি আছে তার একটি ধারণা পেয়েছি। আমি যে ধারণাটি পেয়েছি সেটি শুধু আমার নিজের দলের প্রাপ্ত জরিপ থেকে পাওয়া, অন্য দলগুলো কী পেল সেটিও আমাদের জানতে হবে এবং আমার দলের প্রাপ্ত তথ্যগুলোও তাদের জানাতে হবে। সে জন্য প্রথমেই (আমাদের জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে।
আগে যে দলে কাজ করেছিলাম, আমরা সেই একই দলে কাজ করব।
তথ্য বিশ্লেষণ করার সময় এই দুটি ব্যাপার বিবেচনায় নিতে পারি-
কতজন কোন মাধ্যম ব্যবহারের কথা বলে তা তালিকা আকারে লিখা।
কোন প্রশ্নের সংক্ষেপে উত্তরের একাধিক মতামত থাকলে সেগুলো তালিকা আকারে উল্লেখ করা বিশেষ করে কোন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে তার তালিকা।
জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো পোস্টার কাগজে বা ক্যালেন্ডারের পাতার পেছনের সাদা দিকে লিখে উপস্থাপন করব। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে উপস্থাপন করা যেতে পারে। পোস্টার, বা ক্যালেন্ডার না থাকলে আমাদের খাতার কয়েকটি পৃষ্ঠা একত্রিত করে ফলাফল লিপিবদ্ধ করে প্রত্যেক দল থেকে একজন সবার উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করতে পারি। যেহেতু একটি সেশনের মধ্যে সব দলের উপস্থাপন করতে হবে, তাই সব দল পাঁচ মিনিটের মধ্যে উপস্থাপনা শেষ করব।
আমরা যেহেতু একটি সচেতনতামূলক মানববন্ধন করব, আমাদের তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে যত বেশি ঝুঁকি সম্পর্কে ধারনা থাকবে, ততই ভালো। তাই দলের উপস্থাপনের মাধ্যমে আমরা অনেকগুলো ঝুঁকি চিহ্নিত করে
আমরা জরিপের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের কিছু ঝুঁকি শনাক্ত করেছি, আমরা যাদের কাছ থেকে মতামত বা ইন্টারভিও নিয়েছি তারা হলেন অভিজ্ঞ অর্থাৎ তাদের তথ্য আদান-প্রদানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই সেই অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করেই তারা তাদের মতামত আমাদের দিয়েছেন। যেহেতু আমরা সচেতনতামূলক একটি কার্যক্রম অর্থাৎ মানববন্ধন করতে যাচ্ছি, আমাদের একজন বিশেষজ্ঞের মতামতও প্রয়োজন। এখানে তাহলে আমাদের কেমন বিশেষজ্ঞের মতামতাভের প্রয়োজন হতে পারে? উত্তর: ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন এমন একজন যিনি ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন বা ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা করেছেন বা ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন অথবা হতে পারেন। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক।
আমরা সবাই মিলে আমাদের চেনাজানা ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কে আছেন তা নিয়ে আলোচনা করে একজন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে আমাদের শ্রেণিকক্ষে পরবর্তী সেশনে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাব। আমাদের শিক্ষক আমাদের আইসিটি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ ও আমন্ত্রণ জানাতে সাহায্য করবেন। আমরা জরিপ পরিচালনার জন্য যে প্রশ্নগুলো বিবেচনায় রেখেছিলাম সেগুলোর আলোকেই আইসিটি বিশেষজ্ঞকে প্রশ্ন করে তার গুরুত্বপূর্ণ মতামত নেব।
জরিপের সময় আমরা যে প্রশ্নগুলো বিবেচনায় রেখেছিলাম, সেগুলো ছিল-
কীভাবে তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?
কোন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?
তথ্য আদান-প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হলে কী কী ক্ষতি হতে পারে?
আজ আমাদের জন্য একটি বিশেষ দিন কারণ আমাদের শ্রেণিকক্ষে একজন অতিথি আসছেন। আমরা আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখা প্রশ্নগুলো একে একে তাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিব। তার উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মনে নতুন প্রশ্নও তৈরি হতে পারে, প্রশ্নটি যদি আমাদের সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার জ সহায়ক হয়, তাহলে অবশ্যই প্রশ্নটি করতে পারব। কারণ, আমরা চাই আমাদের মানববন্ধনটি অনেক তথ্যবহুল ও মজার হবে এবং এর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অন্যদেরও উপকারে আসবে।
বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিচের ছকে লিখি
আমরা ইতোমধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ঝুঁকি ওপর দুটি কাজ করে ফেলেছি, আমরা একটি জরিপ পরিচালনা করেছি, আবার একজন বিশেষজ্ঞের মতামতও নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের অনেকগুলো ঝুঁকি শনাক্ত হয়ে গেছে। এবার প্রাপ্ত ঝুঁকিগুলোর আমরা একটি তালিকা তৈরি করব। তালিকায় আমরা ডিজিটাল মাধ্যমের ঝুঁকি এবং সাধারণ মাধ্যমের ঝুঁকি আলাদা করব।
ডিজিটাল মাধ্যমের ঝুঁকি | ডিজিটাল নয় বা সাধারণ মাধ্যমের ঝুঁকি |
---|---|
১। এসএসসি পরীক্ষা সম্পর্কিত একটি ভুল খবর আমার অভিভাবকের ফোনে এল, আমি তা যাচাই না করে আমার সব বন্ধুর অভিভাবকের ফোনে পাঠিয়ে দিলাম।
২। আমি মোবাইল ফোনে গেমস খেলতে গিয়ে একটি জায়গায় আমার অভিভাবকের ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে দিলাম। আমার অভিভাবকের ই-মেইল ঠিকানায় একটি ই-মেইল এ যেখানে লেখা আপনি একটি লটারি জিতেছেন, এই লিংক-এ ক্লিক করে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিন। আমার অভিভাবক তার অ্যাকাউন্টের সব তথ্য দিয়ে দিলেন।
৩।
৪।
৫। | ১। এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে একটি ভুল খবর আমি বিদ্যালয়ে আসার পথে জানতে পারলাম, আমি যাচাই না করে বিদ্যালয়ে এসে আমার সব বন্ধুকে জানিয়ে দিলাম।
২। ফটোকপির দোকানে আমার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ফটোকপি ফেলে এলাম।
৩।
৪।
৫।
|
এই তালিকাটি আমাদের দশ মিনিটে শেষ করতে হবে। তালিকাটি তৈরি হয়ে গেলে একে একে কয়েকজন শ্রেণীকরণ করা ঝুঁকিগুলোর একটি করে ঝুঁকি নিচের ম্যাপের মতো করে বোর্ডে লিখন এবং সবাই নিজের করা তালিকাটির সঙ্গে মিলিয়ে নেবে।
এতক্ষণে আমরা বুঝে গিয়েছি তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কোন মাধ্যমে কী কী ঝুঁকি থাকতে পারে। ডিজিটাল মাধ্যম এবং সাধারণ মাধ্যমের ঝুঁকিগুলো কিছুটা আলাদা। এই দুটি মাধ্যমের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে নিচের ঘরের বর্ণনাটি পড়ে দেখতে পারো।
সাধারণ মাধ্যমের ঝুঁকি বনাম ডিজিটাল মাধ্যমের ঝুঁকি তথ্য আদান-প্রদানের জন্য আমাদের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করতে হয়। আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি আমাদের মুখের ভাষা বা ইশারা। এ ছাড়া সংকেত, লিখিত বক্তব্য বা চিঠির মাধ্যমেও আমরা তথ্য আদান-প্রদান করে থাকি। কিন্তু প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে আমরা টেলিফোন, ইন্টারনেট, ওয়্যারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে কম সময়ে অনেক বেশি তথ্য আদান-প্রদান করি, এতে আমরা দ্রুত তথ্য পৌঁছাতে পারলেও এই মাধ্যমগুলোতে ঝুঁকির পরিমাণও বেশি। কাজেই কেউ যদি ভালো উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করে, তাহলে খুব কম সময়ে অনেক বেশি মানুষের উপকার করা সম্ভব। একইভাবে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে খুব কম সময়ে অনেক বেশি মানুষের ক্ষতি করা যায়। মনে করি, একজন লবণ ব্যবসায়ী ভুল করে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লবন আমদানি করে ফেলেছে। এত বেশি লবণ এনেছে, যে সেটি অনেক দিন ধরে মজুদ করে রাখার যথেষ্ট জায়গাও তার নেই। এখন সে চিন্তা করলো কীভাবে এই লবা দ্রুত বিক্রি করে ফেলা যায়। তাই সে একটি কন্দি পাতলো; সে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, হোয়াটঅ্যাপ ইত্যাদি) একটি গুজব ছড়িয়ে দিল এটি বলে যে আগামীকাল থেকে লবণের দাম ৫গুণ বেড়ে যাবে কারণ যে দেশ থেকে লকা আমদানি করা হতো সে দেশ আর লবণ বিক্রি করবে না। পুরো দেশের অনেক মানুষের মধ্যে লবণ কিনে রাখার হিড়িক পড়ে গেল, এভাবে সেই অসাধু ব্যবসায়ী তার সব লবণ অনেক উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে দিল। আমরা একবার ভেবে দেখি, যদি এই ইন্টারনেট সেবা বা প্রযুক্তি না থাকত তাহলে ঐ অসাধু ব্যবসায় কি এত দ্রুত মানুষকে ঠকাতে পারত? তাই বলে প্রযুক্তি যে খারাপ তা কিন্তু বলা যাবে না, প্রযুক্তির কল্যাণেই আমরা এত আধুনিক জীবন যাপন করতে পারছি। কারণ, যুগে যুগে অনেক ভালো মানুষ, ভালো বিজ্ঞানী, ভালো আবিষ্কারক এখানে অবদান রেখে গেছেন। আমরা সবাই আগামী দিনের ভালো মানুষদের একজন হতে চাই। |
আমরা জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল এবং বিশেষজ্ঞের কাছে প্রাপ্ত তথ্য থেকে কিছু ঝুঁকি চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করেছি, সেটিকে আবার আমরা ডিজিটাল এবং সাধারণ এই দুটি ভাগে ভাগ করেছি। এবার আরেকটি ব্যাপার বিবেচনা করতে পারি। আমরা বলছিলাম ডিজিটাল মাধ্যমে একটি ভুল তথ্য চলে গেলে সেটি কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তাই না?
আমরা যখন সচেতনতার জন্য মানববন্ধন করব এখন আমরা আরেকটি বিষয় নিয়েও সচেতন করতে পারি। সেটি হচ্ছে, ব্যক্তিগত তথ্য। ব্যক্তিগত তথ্য যদি ভুল মাধ্যমে, ভুল জায়গায় বা ভুল ব্যক্তির কাছে চলে যায় তাহলে আমাদের অনেক ধরনের বিড়ম্বনা বা ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়।
নিচের ঘটনাটি আমরা নীরবে পড়ি।
কেস স্টাডি জুয়েল গত বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছেলেদের ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। ওই প্রতিযোগিতার শুরুতেই আরেকজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সে পড়ে যায় এবং উঠে দৌড় শুরু করে। তখন তার বিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতা দেখতে আসা একজন দর্শক তার পড়ে যাওয়ার ছবি তোলে এবং পরে তার সম্মতি ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি ছড়িয়ে দেয়। জুয়েলের বাবা এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পেয়ে জুয়েলকে জানায়, ওই ছবিতে অনেকে ভালো ও উৎসাহমূলক মন্তব্য করলেও কারও কারও মন্তব্য তার কাছে খুবই নেতিবাচক মনে হয়েছে। এতে জুয়েল মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়ে এবং বিষয়টি বিদ্যালয়ের ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষককে জানায়। শিক্ষক অৎক্ষনিকভাবে যে ছবিটি ছড়িয়ে দিয়েছিল তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ছবিটি সরিয়ে নিতে বলেন। ছবিটি সরিয়ে নেওয়ার পরও বিষয়টি নিয়ে জুয়েল এখনও কিছুটা বিষা। |
ভেবে দেখি তো এই ঘটনার মতো আমার জীবনেও কি এমন কোনো কিছু ঘটেছিল কি না? এখানে কী ধরনের তথ্যের আদান-প্রদান হয়েছে?
ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য ব্যক্তিগত তথ্য যখন একজন মানুষের ঝুঁকি বা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন ওই তথ্যগুলোকে গোপন রাখতে হয়, তখনই এই তথ্যগুলো হয়ে যায় ব্যক্তিগত গোপন তথ্য। তাহলে আমাদের বুঝতে হবে কখন একটি তথ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে যায়। আমার নাম- এটি একটি ব্যক্তিগত তথ্য, কিন্তু এটি সবাই জানতে পারে, গোপন করার কিছু নেই। আসলে কি তাই? আমি কি রাস্তায় অপরিচিত একজন আমার নাম জিজ্ঞেস করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আমার নাম বলি? বলি না, আমরা কিন্তু তাকে আগে জিজ্ঞেস করি, তিনি কেন আমার নাম জানতে চাইছেন, তিনি কে, তাই না? অর্থাৎ যাকে আমি তথ্যটি দিচ্ছি, সে কতটা বিশ্বস্ত সেটি আমরা যাচাই করি। একইভাবে, আমার অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে এমন ব্যক্তির হাতে গেলে কী হতে পারে? আমার অভিভাবকে কোন বিপদের ভয় দেখিয়ে ওই ব্যক্তি অর্থ আত্মসাৎ করতে পারে। তাই না? তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম, মাধ্যম বা ব্যক্তিভেদে আমাদের যে কোনো ব্যক্তিগত তথ্যই ব্যক্তিগত গোপন তথ্য হতে পারে। |
কেস স্টাড়িতে জুয়েলের ক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয়েছে। আগের সেশনগুলোতেও আমরা অনেক ঝুঁকি চিহ্নিত করেছিলাম। সেসব ঝুঁকি সবই কিন্তু ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন নয়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ক ঝুঁকিগুলোর জন্য এবার আলাদা একটি তালিকা তৈরি করি। এই কাজটি আমরা দলে আলোচনা করে বের করব এবং আমাদের বাস্তব জীবনের সাঙ্গে ঝুঁকিগুলো মিলিয়ে দেখব। এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা প্রয়োজন হলে আমরা শিক্ষকের সহায়তা নেব।
উপস্থাপনার সময় দল প্রতিনিধি অবশ্যই ব্যাখ্যা দেবে চিহ্নিত সমস্যাটি কেন এবং কীভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ক ঝুঁকি | কীভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয়েছে |
---|---|
এই অভিজ্ঞতার শুরুতেই আমরা জেনেছিলাম বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আমরা ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি কর্মন পরিকল্পনা তৈরি করব।
আগের সেশনগুলোতে আলোচিত বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করেই আমরা কর্ম-পরিকল্পনার ছকটি পূরণ করব। পূর্বের দলগত কাজ থেকে প্রাপ্ত ঝুঁকিগুলো মোকাবেলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার জন্য একই দলে কর্ম- পরিকল্পনা তৈরি করব। এমন পরিকল্পনা করব যেন সেটি সহজেই আমাদের জীবনে প্রয়োগ করা যায়। কৌশল বাস্তবায়নের সময়সীমা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি, ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সামাজিক ও আইনি কৌশল উল্লেখ করব। কৌশল বাস্তবায়ন সময়সীমা যেন অল্প সময়ের হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ধারা-১৬ এর এক অংশে বলা হয়েছে--- ‘যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।‘ |
ঝুঁকি | কোন ধরনের ঝুঁকি (ডিজিটাল/নন ডিজিটাল) | ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সম্ভাবনা | ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল | কৌশল বাস্তবায়নের সময়সীমা |
---|---|---|---|---|
জন্ম নিবন্ধন সনদ নন ডিজিটাল প্রকাশ হওয়া | নন ডিজিটাল | বেশি | জন্ম নিবন্ধন সনদটি নিরাপদে রাখা। অর্থাৎ যেখানে সেখানে এর ফটোকপি না ফেলে রাখা, এর ডিজিটাল কপি অন্য কারও কম্পিউটারে না রাখা, বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে এটি শেয়ার না করা।
| এক সপ্তাহ |
| ||||
|
আমরা আমাদের কাজের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আজকের সেশনে আমরা কিছু প্লাকার্ড তৈরি করব। আমরা গত সাতটি দেশনে যা অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম, তার উপর ভিত্তি করেই প্ল্যাকার্ড তৈরি হবে।
১। আগের সেশনে তৈরি করা কর্ম-পরিকল্পনার আলোকে একই দলে আমরা পূর্বের ঝুঁকি মোকাবিলা বা সচেতনতা বৃদ্ধিবিষয়ক সুন্দর প্ল্যাকার্ড তৈরি করব এবং একটি মানববন্ধন করব।
২। প্লাকার্ড তৈরির সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করব
ঝুঁকির কারণ
ঝুঁকির ধরন
ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আইনি দিক
সামাজিক ও নৈতিক দিক
ঝুঁকি মোকাবিলায় করনীয়
ঝুঁকি মোকাবিলায় সচেতনতা
৩। প্রতিটি দল একাধিক প্ল্যাকার্ড বানাব। প্ল্যাকার্ডে লেখা এমন আকারের হবে যেন সেগুলো দূর থেকে দেখা যায়। সম্ভব হলে আমরা পোস্টার/ আর্ট পেপার/ক্যালেন্ডারের সাদা অংশ/বড় আকারের কাজ ব্যবহার করে প্লাকার্ড প্রস্তুত করতে পারি। লক্ষ্যদল অনুযায়ী কনটেন্ট/বিষয়বস্তু তৈরির অভিজ্ঞতাটি প্রয়োগের বিষয়টি আমরা বিবেচনায় রাখব।
৪। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করছে। গ্রামের কয়েকজন এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। প্রদর্শনীতে ছেলে ও মেঘে শিক্ষার্থী সমান সংখ্যক থাকবে। প্লাকার্ডে লেখাগুলো অস্পষ্ট থাকবে।
১. প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিদ্যালয়ের বারান্দা বা এমন স্থান থেকে প্রদর্শন করব যেন তা বিদ্যালয়ের বাইরের লোকজনও দেখতে পায়।
২. প্ল্যাকার্ড নিয়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রদর্শন করব। এই প্রদর্শনটির সময় কেউ যদি এ ব্যাপারে জানতে ডান তখন আমরা এই বিষয়ে তথ্য দেব এবং বুঝিয়ে বলৰ
৩. প্লাকার্ড প্রদর্শন কার্যক্রমটি ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলবে। সম্পূর্ণ কার্যক্রমে আমাদের শিক্ষকও সঙ্গে থাকবেন।
কর্ম-পরিকল্পনার নির্দিষ্ট একটি কৌশল আমার বাড়িতে কাজে লাগাব। যেমন আমি হয়তো একটি কৌশল ঠিক করলাম, আমার পরিবারের ব্যক্তিগত যত ছবি আছে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমি নেব। তাহলে আমি আমার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনে যদি কোনো ব্যক্তিগত ছবি থাকে, তা যেন নিরাপদ থাকে তার উদ্যোগ নিবা উদ্যোগ হতে পারে। অ্যাপস লক করা, ব্যক্তিগত ছবি মুছে দেওয়া, মোবাইল ফোন লক রাখা ইত্যাদি।
এই কাজের অগ্রগতির একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা আমার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তারকা (*) সংগ্রহ করব। পরিবারের সদস্যদের আমার কাজ সম্পর্কে বুঝিয়ে বলব যে আমি কী কাজ সম্পন্ন করলাম এবং এটি কেন করলাম। পরিবারের সদস্য মূল্যায়ন করবেন যে আমি কাজটি কতটা ভালো করেছি। সর্বোচ্চ তিনটি তারকা আমরা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পেতে পারি। আমরা যদি খুব ভালো কৌশল প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে তিনটি তারকা, ভালো হলে দুটি তারকা এবং কিছুটা সংশোধনের প্রয়োজন হলে একটি তারকা পেতে পারি।
অভিভাবকের মূল্যায়ন,
পারদর্শী
ঝুঁকি মোকবেলায় গৃহীত কৌশল
কী উপকার পাওয়া গেল
প্রারম্ভিক
মানববন্ধনটি আয়োজন করতে গিয়ে আমরা গত ৮টি সেশনে বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এর মধ্যে আমরা জানতে পেরেছি ব্যক্তিগত তথ্য কী, তথ্যের আদান-প্রদান কীভাবে ঝুঁকির কারণ হতে পারে এবং ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়। শুধু যে আমরা শিখেছি তা-ই না, আমরা আমাদের আশপাশের মানুষকেও সচেতন করতে পেরেছি এবং পরিবারের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাবিষয়ক সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। কাজটি করতে গিয়ে আমরা আনন্দ পেয়েছি এবং যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা আমরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগাবো।
আরও দেখুন...